1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

গল্প • গোধূলি– মৌসুমী ভট্টাচার্য্য

•  ছোট গল্প



গোধূলি

মৌসুমী ভট্টাচার্য্য



ঘরের লাগোয়া ঝুল বারান্দায় দাঁড়িয়ে সন্ধ্যা কাটানো হিমানীর বড় প্রিয়। মাধবীলতার এক ঝাঁড় পাইপ বেয়ে উঠে এসেছে,ছোট সাদা ফুলগুলির মৃদু সুবাস বাতাসে ছড়াচ্ছে। আধো-আঁধারে বেতের চেয়ারে বসে আকাশ দেখা খুব ভালো লাগে।কিন্তু কাজ থাকে। সন্ধ্যা আরতি, ঘরে ঘরে ধূপ দেখানো, সন্ধ্যার চা বানানো। এরপর রেওয়াজ। ইমন, ভূপালী... সান্ধ্য রাগগুলো তানপুরা বাজিয়ে গাওয়া। প্রথমে আলাপ দিয়ে  শুরু, ক্রমে বিস্তার। মন্দ্র সপ্তক থেকে মধ্য, মধ্য সপ্তক থেকে তার সপ্তক। যেনো নববধূ তার নতুন বাড়িতে প্রবেশ করছে।


অলঙ্করণ : বিশ্বজিৎ মণ্ডল


রাবেয়া– সন্ধ্যার নিবু নিবু আলোতে সূর্যাস্ত দেখা , রাবেয়ার ভীষণ প্রিয়। সারাদিন এই ভাঙাচোরা খন্ডহরের ভিতরেই থাকে। তালাকের পরে আবার বাবার বাড়িতে ফিরে আসতে হয়েছে। আব্বাজান নেই,ভাইদের সংসারে গলগ্রহ হয়ে থাকা। মুখে কেউ কিছু না বললেও সে মরমে মরে থাকে। শুধু গোধূলির এই সময়টুকু তার একান্ত। ঘরের লাগোয়া ছাদে  বেতের চেয়ারে বসে পায়রাগুলিকে দানা খাওয়ানো তার প্রিয় কাজ। বকম বকম শব্দে পায়রাগুলো খুঁটে খেতে থাকে। কয়েকটি তার কাঁধে,মাথায় বসে।সাদা,খয়েরী,শ্লেট রঙা পায়রাগুলোর মাঝে সে বসে থাকে,মুখে এক প্রশান্তির হাসি।


নীনা– এক কাপ চা হাতে ব্যলকনিতে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত দেখা, নীনার বড়ই প্রিয়। কি ভাবে লাল গোলার মত একটি বল দূরের কালো পাহাড়ের পেছনে ধীরে ধীরে নেমে যাচ্ছে ! কমলা, আবীর রঙের সমারোহ ...সারা আকাশ জুড়ে। এক ঝাঁক পাখীরা দলবঁধে ফিরে যাচ্ছে। ‘কোথায় যাচ্ছে! তাদের ঘরে!’, মনে মনে ভাবে নীনা।পাশেই মসজিদ থেকে ‘আল্লাহ্...আকবর’,অণুরণিত হতে থাকে। নীনার মনে হয়, কোথাও তো স্রষ্টা আছেন..যিনি এই বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করে চলেছেন। কাছেই এক পার্কে ছোট ছেলেমেয়েরা খেলা সেরে বাড়ি ফিরছে। কিছু মহিলা ব্যস্ত পায়ে সান্ধ্য ভ্রমণ সেরে নিচ্ছে। চাপচাপ অন্ধকার গাঢ় হচ্ছে ধীরে। নীনা প্রাণ ভরে দৃশ্যগুলো উপভোগ করে।


কুলদীপ– কুলদীপ মাত্রই ডিউটি শেষ করেছে। আসাম রাইফেলসের বিশাল মাঠটি শুনশান। সন্ধ্যা হচ্ছে, আকাশে একমুঠো তারা মিটমিট্ করছে।  মাঠের একপাশের বটগাছটিতে ভারী কলরব। পাখিগুলি এতো চেঁচামেচি শুরু করেছে, মনে হচ্ছে যেনো জায়গা নিয়ে কাজিয়া হচ্ছে। কুলদীপ হেসে হনুমান মন্দিরের দিকে পা বাড়ায়। জওয়ানেরা সবাই মিলে ঢোলক বাজিয়ে কীর্তন করে। কুলদীপ অপেক্ষা করে থাকে এই সময়টির। তার বড় প্রিয় এই গোধূলি।


হিমানী–  ঘরের লাগোয়া ঝুল বারান্দায় দাঁড়িয়ে সন্ধ্যা কাটানো হিমানীর বড় প্রিয়। মাধবীলতার এক ঝাঁড় পাইপ বেয়ে উঠে এসেছে,ছোট সাদা ফুলগুলির মৃদু সুবাস বাতাসে ছড়াচ্ছে। আধো-আঁধারে বেতের চেয়ারে বসে আকাশ দেখা খুব ভালো লাগে।কিন্তু কাজ থাকে। সন্ধ্যা আরতি, ঘরে ঘরে ধূপ দেখানো, সন্ধ্যার চা বানানো। এরপর রেওয়াজ। ইমন, ভূপালী... সান্ধ্য রাগগুলো তানপুরা বাজিয়ে গাওয়া। প্রথমে আলাপ দিয়ে  শুরু, ক্রমে বিস্তার। মন্দ্র সপ্তক থেকে মধ্য, মধ্য সপ্তক থেকে তার সপ্তক। যেনো নববধূ তার নতুন বাড়িতে প্রবেশ করছে।


প্রসূন– অফিস থেকে ফিরে  দোতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে  সন্ধ্যার নক্ষত্রখচিত আকাশ দেখা প্রসূনের বড় প্রিয়। এই সময় তার একান্তে পুরনো স্মৃতিচারণ করতে বড় ভালো লাগে। কি সুন্দর বাঁকা একফালি  ত্রয়োদশীর চাঁদ ! কেউ কাস্তের সাথে তুলনা  করেছেন, পি.বি.শেলী একে নৌকোর সাথে তুলনা করেছেন। ব্যর্থ প্রেমিক প্রসূন এই চাঁদে তার প্রেমিকা শ্রী –কে খোঁজে। চাঁদের মতই স্নিগ্ধ রূপ ছিল তার। মনে পড়ে, এমনি এক চাঁদনী রাতে সে আর শ্রী ছাদে বসেছিল। ‘তুমি সন্ধ্যার মেঘমালা...’, এই গানটি শ্রী গেয়েছিল। প্রসূনের হৃদয় গর্বে ভরে গিয়েছিল। এই নারী শুধুই তাকে ভালবাসে...শুধুই তার, ...এই অনুভবে সে গর্বিত প্রেমিক হয়ে উপভোগ করছিল মুহূর্তটিকে। এখন শুধুই স্মৃতি...হৃদয়ের মণিকোঠায় বদ্ধ। হাতের জ্বলন্ত সিগারেটে শেষ টান দিয়ে সে গুনগুন্ করে গেয়ে ওঠে  তার প্রিয় গান, ‘সেদিন ও আকাশে ছিল কত তারা.. , আজও মনে আসে, ..তোমারি কথা’।


দিল্লীর আকাশে সন্ধ্যা নামল। কুতুব মিনারের  উপরের লাল বাতিটি টিমটিম করছে। লোধী গার্ডেনে কয়েকজন বয়স্ক ভদ্রলোক রোজকার সান্ধ্য আড্ডা সেরে যে যার বাড়ির দিকে রওনা হয়েছেন। আবার আগামীকাল  বিকেলে মিলবেন, এই আশা ।

Joydeb Biswas

Poet Joydeb Biswas studied Bengali literature. In 2015, at the age of 22, he published 'Sahitya Chetona' magazine. Currently two editions of the magazine are published. One is the online version and the other is the printed version. He is the founder and editor of the two editions. facebook twitter youtube instagram whatsapp

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন